স্ত্রী যদি অন্য পুরুষের অধিনে চাকরি করে স্বামী কি দাইয়ূস হবে?

🔹স্ত্রী যদি অন্য পুরুষের অধিনে চাকরি করে স্বামী কি দাইয়ূস হবে? -Dr. Mohammad Monzur-E-Elahi
🔹স্ত্রীকে চাকুরী করার অনুমতি দেওয়া যাবে কি? তার অর্জিত অর্থ স্বামী গ্রহণ করতে পারবে কি?


✅উত্তর : শর্তসাপেক্ষে স্ত্রীদেরকে চাকুরীর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। যেমন,
(১) জীবিকার জন্য কাজ করতে বাধ্য হলে
(২) কাজটি পুরুষদের সাথে মিলিতভাবে না হলে
(৩) বাড়ির মধ্যেই করা যায় এরূপ কোন কাজ না পাওয়া গেলে
(৪) সার্বক্ষণিক পর্দার মধ্যে থাকা সম্ভব হলে
(৫) কাজটা ইসলাম বিরোধী না হলে
(৬) কাজটি মহিলাদের কাজের উপযোগী হলে
(৭) স্বামী, সন্তান এবং গৃহের ব্যাপারে অবহেলা সৃষ্টি না হলে
(৮) কর্মক্ষেত্র যদি সফরের পর্যায়ে পড়ে, তাহলে মাহরাম সাথে থাকলে।
উপরোক্ত শর্তাবলী পুরণ করা সাপেক্ষে মহিলাদেরকে চাকুরীর অনুমতি দেওয়া যাবে এবং প্রয়োজনে তার অর্জিত অর্থ গ্রহণ করা যাবে।
——————————————-
‎”দাইয়ুস” জাহান্নামি এবং ‘কবিরা গুনাহকারি’
“আপন স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের সুযোগ দেয়া” কবিরা গুনাহ। ঐ ব্যক্তিকে “দাইয়ুস” বলে যে তার স্ত্রী’কে ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে অশ্লীল কাজ ও ব্যভিচারের সুযোগ দেয় বা সুযোগ করে দেয়।
রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ
তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জন্য জান্নাত হারাম করেছেনঃ
১) যে মদ তৈরী করে।
২) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে এবং
৩) ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি(দাইয়ুস) যে নিজ স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচার করতে সুযোগ দেয়।
***আহমাদঃ ৫৮৩৯।
টিকাঃ
“দাইয়ুস” ঐ ব্যক্তিকে বলে যে তার স্ত্রী পরিবারের অন্য সদস্যরা অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভাল মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে। উপরের হাদিসটির ব্যাখ্যা ব্যাপক। এখানে মুল হল অশ্লীলতা। যে তার নিজ ঘরে ইসলাম অনুশাসনে শিথিলতা করে, মেয়েদের পদা করতে উতসাহ দেয় না, আদেশ করেনা, ঘরে সিনেমা, গান-বাজনা দিব্যি চলে, এর কোন প্রতিবাদ করে না; এই রকম সকল শরিয়াহ বিরোধি কাজকে মেনে নেয় – সেই হল ‘দাইয়ুস’। আর ব্যভিচার তার মাঝে একটি। আমাদের সমাজের অনেক হাজ্বী-গাজী, দাড়ি-টুপিওয়ালা, পাচ (৫) ওয়াক্ত নামাজী লোক দেখা যায় ! কিন্তু তাঁদের স্ত্রী ও মেয়েদেরকে দেখা যায় রাস্তা-ঘাটে বে-পর্দা হয়ে বের হতে ! কী কাজে আসবে তাঁর এই পরহেজগারিতায় ! দাইয়ুস হয়ে তাকে যেতে হবে জাহান্নামে ! কারন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তিন(৩) প্রকার লোকদের জন্য আল্লাহপাক জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। অনবরত মদ পান কারী, পিতা-মাতার অবাধজন এবং “দাইয়ুস” এমন ব্যক্তি যে তার পরিবারের অশ্লীলতা কে মেনে নেয়”।
*** আহমাদ, সাহীউল জামে ৩০৪৭।
আবার অনেক পরহেজগার পিতা/অভিভাবক তার পরিবারের অনেক অশ্লীল কাজ দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন ! বা অনেকে ছোট-খাট ব্যাপার মনে করে এইগুলো কে উড়িয়ে দেন ! না কক্ষনো না, এই গুলোকে ছোট-খাট বিষয় মনে করে সেই পরহেজগার পিতা/অভিভাবক সফলকাম হতে পারবেনা। তাই চলুন আমরা সেইসব পিতা/অভিবাবকদের উপরোক্ত হাদীসটি জানিয়ে দেই। এবং তাদের দায়্যিত্ব সম্পর্কে সজাগ করে দেই।
আললাহ আমাদেরকে সঠিক পথে হেদায়েত নসিব করুন। আমিন।
———————————————————–
*মুসলিম রমনী ও পাশ্চাত্য সভ্যতার নারীর মধ্যে পার্থক্যঃ
-শাইখ আলী তানতাবীর সাক্ষাতকার আরবী দৈনিক খবরের কাগজ (আশশারকুল আউসাত) ২৭শে মুহাররাম ১৪০৯ হিজরিতে প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন যে, এক অধ্যাপক আমাকে বলেন, তিনি আমেরিকার কোন এক কনফারেন্সে “মুসলিম রমনী” বিষয়ে স্বীয় প্রবন্ধ পড়ে শোনাচ্ছিলেন। তিনি সম্মেলনের শ্রোতাদের সামনে মুসলিম রমনীদের অর্থনীতির উপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন যে, একজন মুসলিম রমনী সে নিজস্ব ফান্ড রাখতে পারে যার উপর তাঁর স্বামীর কোন অধিকার নাই। আর না পিতা তাঁর সম্পদ নিজ আয়ত্তে আনতে পারেন। যদি কোন মহিলার দারিদ্রতা চলে আসে আর দৈনিক প্রয়োজনীয় খরচসমূহের সমস্যা দেখা দেয় তবে এর দায়-দায়িত্ব তাঁর পিতা অথবা ভাইয়ের উপর বর্তায়। যদি তাঁর পিতা ও ভাই না থাকে তবে তাঁর কোন নিকট আত্মীয় তাঁর দেখাশুনার দায়িত্ব বহন করবে যে, তাঁর স্বত্বাধিকারী (ওয়ারিশ) হতে পারে। যদিও সে তাঁর চাচাত ভাই হোক না কেন? এই মেয়ের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান তাঁর বিয়ের আগ পর্যন্ত তাঁর আত্মীইয়ের উপর ওয়াজীব। এরপর যখন তাঁর বিয়ে হবে তখন তাঁর ভরণ-পোষণ এর দায়িত্ব তাঁর স্বামীর উপর বর্তাবে। মহিলা যদিও লাখপতি হয় আর স্বামী সাধারণ শ্রমিক তবুও মেয়েটিকে এমন বলা হবে না যে, সে যেন নিজের ভরণ-পোষণ নিজে বেবস্থা করে; বরং স্বামীর উপর ওয়াজীব হলো যে, পরিশ্রম করে হলেও তাঁর স্ত্রীর ভরণপোষণের বেবস্থা করা। এছাড়াও মুসলিম রমণীদের অনেক অধিকার তাদের জন্য সংরক্ষিত যা থেকে অন্যান্য জাতির নারীরা বঞ্চিত।
এই প্রবন্ধটি শোনামাত্রই এক আমেরিকান নারী যে বিখ্যাত সাহিত্যিক দাঁড়িয়ে বলতে লাগলোঃ যদি মুসলিম নারীদের জীবনের নিরাপত্তা তোমাদের (অর্থাৎ মুসলমানদের) কাছে এমনই হয়ে থাকে যেমন তুমি এই মাত্র বর্ণনা দিলে। তবে তোমরা আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে চলো। আমি তোমাদের সাথে ছয় মাস পর্যন্ত জীবন-যাপন করবো, এরপর তোমরা আমাকে হত্যা করে দিও।
আমেরিকার নারীর কথা শুনে অধ্যাপকের খুবই আশ্চর্য মনে হলো।
সুতরাং মহিলাকে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আমেরিকার নারী নিজের ও তাঁর অন্যান্য আমেরিকান নারীদের অবস্থা সম্পর্কে ধারনা দিতে গিয়ে অধ্যাপকের কথার উত্তরে বলেনঃ
যখন আমেরিকার নারীরা নারী স্বাধীনতার শ্লোগান দিতে বের হয় তখন বাস্তবে তারা বন্দী থাকে। নিজেদের সম্মানের ধারক ও বাহক মনে করে; কিন্তু বস্তুতঃ অপমান ও লাঞ্চনা বঞ্চনার গভীর গর্তে পতিত হয় যার উপলব্ধি তারা উপযুক্ত সময়ে করতে পারে না। পুরুষরা নারীদের দ্বারা সর্বনিম্ন স্তরের কাজের জন্য ব্যাবহার করে আর তাকে প্রকাশ্যে খুব সম্মান ও ভালবাসা দেখিয়ে উৎসাহিতও করে দাবার গুটির মত থাকে; কিন্তু যখন কোন বড় ধরনের বিষয় আসে তখন নারীকে ডালে পড়ে মরা মাছির মত বের করে নিক্ষেপ করে; বরং এমন অবস্থায় নারীর কাছে পরামর্শ নেয়াটাও ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে।
হ্যাঁ তবে গাড়ী থেকে নামার সময় নারীর মোলায়েম হাত বড়ই যত্নের সাথে ধরে নেয় যাতে তাঁর কোন কষ্ট না হয় এবং সে সহজে নেমে জেতে পারেন। আর ভ্রমন ও সাক্ষাতের সময় নারীদের সামনে যেতে দেয়া হয়। কখনো দেখা যায় রেল গাড়ী অথবা বাসে আসন থেকে উঠে দাঁড়ীয়ে মহিলাকে বসতে দেয়া অথবা তাঁর জন্য রাস্তা ছেড়ে দেয়া হয়; কিন্তু এর পিছনে যা করা হয় তা খুবই ঘৃণিত ও তাঁর মর্যাদা হানিকর।
আমাদের পশ্চিমা সমাজে যখনই মেয়ে যৌবনে পা রাখে তখন থেকে তাঁর পিতার আশ্রয় থেকে বঞ্চিত। পিতা তাঁর স্নেহের হাত গুটিয়ে নেয়। নিজের যুবতী মেয়ের জন্য তাঁর দরজা বন্ধ করে দেয় এবং তাকে বলেঃ যেখানে যাওয়ার যাও। তোমার আয় রোজগার তুমি নিজে করো। আজ থেকে আমার উপর তোমার কোন অধিকার বাকী নেই। এখন নিরুপায় একটি যুবতী মেয়ে কোথায় কি করবে? জীবনের জন্য তো কিছু করতেই হবে।
সুতরাং সে বাড়ী থেকে বের হয়ে বাইরে পা রাখে। জীবনের কঠিন সমস্যার পাহাড় সে একাই অতিক্রম করে। এই দুনিয়ায় মানুষ নামের পশুর আধিক্য রয়েছে। চারিদিকে ক্ষুধার্ত বাঘের ভীড়। রক্ত পিপাশু ভাল্লুক তাঁর লোভাতুর জিহ্বা খুলে শিকারের তালাশে রয়েছে। আর তাদের সামনে মোলায়েম শ্রেনীর রুপে যেই তাজা তাজা শিকার রয়েছে সব তাদের লক্ষ্য।
আহ! এই হলো সেই আমেরিকার নারী যার যৌবনের উপর সবার দৃষ্টি! তাঁর বাড়ীর পরিবারের সদস্যদের কখনো কোন ভাবনা হয় না যে, ঘর থেকে বের হলে তাঁর সম্মান-মর্যাদা কোন পেশার মাধ্যমে টিকে থাকবে? হাতের পরিশ্রমের কাজ করে না কি পবিত্রতা ও সম্মান বিক্রি করে? কখনো ভুলেও জিজ্ঞেস করে না যে, নিজেরই এই সন্তান নিজ হাতের আয় দিয়ে চলছে না কি ইজ্জত-সম্মান বিক্রি করে? কোন অফিসে সেক্রেটারীর পদে নিজের শরীরের সৌন্দর্য দেখিয়ে বেতন পাচ্ছে না কোন শো-রুমে মডেলিং করে। আর হ্যাঁ! এই মরণব্যাধি শুধু আমেরিকাতেই নয়; বরং পাশ্চাত্য সভ্যতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলে এমন সকল দেশেই রয়েছে।
-”’সোনালী কিরণ”’। পেইজ, ১২১।
গ্রন্থকার, আব্দুল মালেক মুজাহিদ। Darusssalam.

Comments are closed.