Monthly Archives: August 2022

আমি ভাবতাম – আচ্ছা, সূরা ফাতিহা প্রতি ওয়াক্তে, প্রতি রাক’আতে তিলাওয়াত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে কেনো?- আরিফ আজাদ

কেনো প্রতি ওয়াক্তে আমাদেরকে বলতে হয়— ‘হে আল্লাহ, আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে আপনি পরিচালিত করুন’? 

এর একটা সম্ভাব্য উত্তর আমি পেয়েছিলাম নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে। তিনি বলেছিলেন, ‘কিয়ামতের প্রাক্কালে এমন হবে যে— মানুষ সকালবেলা মুমিন থাকলেও সন্ধ্যেবেলা কাফের হয়ে যাবে। সন্ধ্যেবেলা কাফের থাকলেও, সকাল হতে হতে মুমিন হয়ে যাবে। অর্থাৎ— সময়টা এতোটা অস্থির আর সঙ্কটাপন্ন থাকবে যে— কার ঈমান কখন আসছে আর কখন যাচ্ছে তা বুঝে উঠাই মুশকিল হয়ে যাবে। 

এজন্যে প্রতি সালাতে, প্রতি ওয়াক্তে এবং প্রতি রাক’আতে আমাদেরকে ঈমানের পথে অটল-অবিচল থাকার প্রার্থনা করতে হয়। আসরের সালাত পড়ে বাসায় এসে মাগরিবের আগে যে ঈমানহারা হয়ে যাবে না— তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই আসরের সালাতে ‘ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাক্বীম’ তথা ‘আমাদেরকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করুন’ এই আয়াত তিলাওয়াত করে আসার পর মাগরিবের সালাতে গিয়েও একই আয়াত আবার, বারবার আমাদের পড়তে হয়। 

আসর থেকে মাগরিব— এই অল্প সময়ের মাঝেও যে আমরা সংশয়ে পড়ে যাবো না, আমাদের ঈমান হুমকির মুখে পড়ে যাবে না তার নিশ্চয়তা আমরা কেউ দিতে পারি না। তাই আসরের সালাতে আল্লাহর কাছে হিদায়াত চেয়ে এসে মাগরিবের সালাতে গিয়ে আবার হিদায়াত চাইতে হয়। মাগরিবের সালাতে হিদায়াত চেয়ে এসে ইশা’তে গিয়ে আবার চাওয়া লাগে। এই হিদায়াত চাওয়াটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা আমাদের জন্য দৈনিক রুটিন বানিয়ে দিয়েছেন। 

মুসা আলাইহিস সালামের কওম বনি ইসরাঈলিদের একটা ঘটনা পড়ে আমার মনে হলো— এই যে প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আমরা বাধ্যতামূলকভাবে আল্লাহর কাছে হিদায়াত প্রার্থনা করি, এটা অতি-অবশ্যই জরুরি ছিলো। 

ফেরাউনের অত্যাচারের বর্ণনা কুরআন থেকে আমরা যথেষ্ট পাই। বনি-ইসরাঈলিদের জীবনকে ছারখার করে দিচ্ছিলো অত্যাচারী, জালিম ফেরাউন। হেন কোন অত্যাচার-নির্যাতন আর নিষ্পেষণ নেই যা ভোগ করতে হচ্ছিলো না বনি-ইসরাঈল সম্প্রদায়কে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা নবি মুসা আলাইহিস সালামের মাধ্যমে এই জালিম শাসকের হাত থেকে বনি-ইসরাঈলিদের মুক্তি দিলেন। শুধু তা-ই নয়, বনি-ইসরাঈলিদের চোখের সামনে ফেরাউন এবং তার বাহিনীকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা ডুবিয়ে মারলেন লোহিত সাগরের অতল তলে।

বনি-ইসরাঈলিদের প্রতি এই অপার দয়া আর অনুগ্রহ এবং মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালার এই শক্তির পরিচয় বনি-ইসরাঈলি সম্প্রদায়ের প্রত্যেকটা লোক খুব কাছ থেকে, নিজের চোখে অবলোকন করেছে। 

একবার দৃশ্যটা ভাবুন তো— আপনার চোখের সামনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা আপনার জন্যে সমুদ্রের মাঝে পথ তৈরি করে দিলেন। সেই পথ ধরে হেঁটে আপনি পার হয়ে গেলেন সু-বিশাল সমুদ্র! আপনার চারপাশে থৈ থৈ করছে সমুদ্রের জল। কোন এক অদৃশ্য শক্তি-বলে জলের এই স্রোত যেন আটকে আছে। আছড়ে পড়লেই অতল তলে তলিয়ে যাবেন আপনি। কিন্তু না! আপনাকে পথ করে দিতে সমুদ্র যে পালন করছে এক মহান দায়িত্ব! 

পেছনেই আপনার শত্রুবাহিনী যারা এতোদিন ধরে অতিষ্ঠ করে তুলেছে আপনার জীবন। হত্যা করেছে আপনার অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, ভাই-বন্ধু-পরিজন। আপনার জীবনকে ছারখার করে দিতে এমন কোন আয়োজন নেই যা তারা করেনি। আপনি দেখতে পাচ্ছেন— সমুদ্রের বুকে তৈরি হওয়া যে পথ ধরে আপনি পার হয়ে এসেছেন, সেই একই পথ ধরেছে আপনার শত্রুবাহিনীও। ভীষণ দাপটের সাথে তারা ছুটে আসছে আপনাকে বন্দী করতে। একবার ধরতে পারলেই সবকিছু শেষ!

কিন্তু সবকিছু শেষ আপনার হয়নি, হয়েছে তাদের। সমুদ্রের যে জল দু’ভাগ হয়ে আপনার জন্য পথ তৈরি করেছিলো, সেই একই জল মাঝ দরিয়ায় আপনার শত্রুবাহিনীর ওপরে প্রবল শক্তিতে আছড়ে পড়লো। 

এমন ঘটনা যদি আপনার জীবনে ঘটতো, কেমন হতো আপনার ঈমানের অবস্থা? চিন্তাও করা যায় না! 

আল্লাহর এমন চাক্ষুষ সাহায্য, এমন অপার রহমত লাভ করতে পারলে যেখানে আমরা সারাটা জীবন সিজদায় লুটিয়ে পড়ে কাটিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছি, সেখানে বনি-ইসরাঈল সম্প্রদায় কী করেছে? 

ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তিলাভের কিছুদিন পরে, আল্লাহর আদেশে মুসা আলাইহিস সালাম গেলেন তূর পাহাড়ে। তিনি সেখানে চল্লিশ দিন থাকবেন। বনি-ইসরাঈল সম্প্রদায়ের কাছে রেখে গেলেন নিজের ভাই হারুন আলাইহিস সালামকে। মুসা আলাইহিস সালামের এই চল্লিশ দিনের অনুপস্থিতিতেই, বনি-ইসরাঈল সম্প্রদায় একটা কৃত্রিম বাছুরের মূর্তিকে নিজেদের ‘ইলাহ’ মেনে নিয়ে উপাসনা শুরু করে দিয়েছে। ভাবা যায়? 

এরা স্ব-চক্ষে মুসা আলাইহিস সালামের মুজিযাগুলো দেখেছে আগে। মুসা আলাইহিস সালামের হাতের লাঠি ছেড়ে দিলে যেটা বিশালকায় সাপ হয়ে যেতো— সেই ঘটনা এরা জানতো। বাক্সে ভরে কীভাবে মুসা আলাইহিস সালামকে দরিয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, কীভাবে ফেরাউন-পত্নীর মাধ্যমে মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের গৃহে আশ্রয় পান, কীভাবে শত্রুর ঘরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা মুসা আলাইহিস সালামকে বড় করে তুলেছেন— এর সবই এদের জানা। 

তা তো বটেই! মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর লাঠি দিয়ে যখন সমুদ্রের পানিতে আঘাত করলো, সাথে সাথে সমুদ্র ফুঁড়ে যে রাস্তা তাদের জন্য তৈরি হয়েছে, সেটা কি তারা দেখেনি? তারা কি দেখেনি ফেরাউন তার বাহিনী সমেত কীভাবে ডুবে মরেছে সমুদ্রের অথৈ জলে? এসবকিছুই তারা দেখেছে। 

এসবকিছু দেখার পরেও, কেবলমাত্র কিছু সময়ের ব্যবধানে তারা মুসা আলাইহিস সালামের রবকে ত্যাগ করে পূজো করা শুরু করে দিলো একটা কৃত্রিম বাছুরের প্রতিকৃতিকে! এই পদস্খলনকে আপনি কোন অভিধায় ভূষিত করবেন, বলুন? 

এতো আশ্চর্য আশ্চর্য ঘটনা নিজেদের চোখে দেখে, নিজেদের কানে শুনেও ঈমানহারা হতে তাদের সময় লেগেছে কয়েকটা দিন মাত্র! এতোকিছু এতো নিবিড়ভাবে দেখবার পরেও বনি-ইসরাঈল সম্প্রদায়ের যদি এই অবস্থা হয়, সেখানে আমাদের অবস্থা তো আরো করুণ হওয়ার কথা। 

তাই, বনি-ইসরাঈলি সম্প্রদায়ের মতো ঈমানহারা হয়ে চরম দূর্ভোগ আর দূর্দশায় যাতে আমাদের নিপতিত না হতে হয়, সেজন্যেই প্রতি ওয়াক্ত সালাতে, প্রতি রাক’আতে তিনি আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাক্বীম তথা ঈমানের পথে, তাঁর রাস্তায় থাকার ফরিয়াদ করতে শিখিয়ে দিয়েছেন। আমরা সূরা ফাতিহার মধ্যে প্রতিবার বলি— 

‘ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাক্বীম’।

‘আর, আমাদেরকে দেখান সরল-সঠিক পথ’।

::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

‘কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ-১১’

স্ত্রী যদি অন্য পুরুষের অধিনে চাকরি করে স্বামী কি দাইয়ূস হবে?

🔹স্ত্রী যদি অন্য পুরুষের অধিনে চাকরি করে স্বামী কি দাইয়ূস হবে? -Dr. Mohammad Monzur-E-Elahi
🔹স্ত্রীকে চাকুরী করার অনুমতি দেওয়া যাবে কি? তার অর্জিত অর্থ স্বামী গ্রহণ করতে পারবে কি?


✅উত্তর : শর্তসাপেক্ষে স্ত্রীদেরকে চাকুরীর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। যেমন,
(১) জীবিকার জন্য কাজ করতে বাধ্য হলে
(২) কাজটি পুরুষদের সাথে মিলিতভাবে না হলে
(৩) বাড়ির মধ্যেই করা যায় এরূপ কোন কাজ না পাওয়া গেলে
(৪) সার্বক্ষণিক পর্দার মধ্যে থাকা সম্ভব হলে
(৫) কাজটা ইসলাম বিরোধী না হলে
(৬) কাজটি মহিলাদের কাজের উপযোগী হলে
(৭) স্বামী, সন্তান এবং গৃহের ব্যাপারে অবহেলা সৃষ্টি না হলে
(৮) কর্মক্ষেত্র যদি সফরের পর্যায়ে পড়ে, তাহলে মাহরাম সাথে থাকলে।
উপরোক্ত শর্তাবলী পুরণ করা সাপেক্ষে মহিলাদেরকে চাকুরীর অনুমতি দেওয়া যাবে এবং প্রয়োজনে তার অর্জিত অর্থ গ্রহণ করা যাবে।
——————————————-
‎”দাইয়ুস” জাহান্নামি এবং ‘কবিরা গুনাহকারি’
“আপন স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের সুযোগ দেয়া” কবিরা গুনাহ। ঐ ব্যক্তিকে “দাইয়ুস” বলে যে তার স্ত্রী’কে ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে অশ্লীল কাজ ও ব্যভিচারের সুযোগ দেয় বা সুযোগ করে দেয়।
রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ
তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জন্য জান্নাত হারাম করেছেনঃ
১) যে মদ তৈরী করে।
২) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে এবং
৩) ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি(দাইয়ুস) যে নিজ স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচার করতে সুযোগ দেয়।
***আহমাদঃ ৫৮৩৯।
টিকাঃ
“দাইয়ুস” ঐ ব্যক্তিকে বলে যে তার স্ত্রী পরিবারের অন্য সদস্যরা অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভাল মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে। উপরের হাদিসটির ব্যাখ্যা ব্যাপক। এখানে মুল হল অশ্লীলতা। যে তার নিজ ঘরে ইসলাম অনুশাসনে শিথিলতা করে, মেয়েদের পদা করতে উতসাহ দেয় না, আদেশ করেনা, ঘরে সিনেমা, গান-বাজনা দিব্যি চলে, এর কোন প্রতিবাদ করে না; এই রকম সকল শরিয়াহ বিরোধি কাজকে মেনে নেয় – সেই হল ‘দাইয়ুস’। আর ব্যভিচার তার মাঝে একটি। আমাদের সমাজের অনেক হাজ্বী-গাজী, দাড়ি-টুপিওয়ালা, পাচ (৫) ওয়াক্ত নামাজী লোক দেখা যায় ! কিন্তু তাঁদের স্ত্রী ও মেয়েদেরকে দেখা যায় রাস্তা-ঘাটে বে-পর্দা হয়ে বের হতে ! কী কাজে আসবে তাঁর এই পরহেজগারিতায় ! দাইয়ুস হয়ে তাকে যেতে হবে জাহান্নামে ! কারন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তিন(৩) প্রকার লোকদের জন্য আল্লাহপাক জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। অনবরত মদ পান কারী, পিতা-মাতার অবাধজন এবং “দাইয়ুস” এমন ব্যক্তি যে তার পরিবারের অশ্লীলতা কে মেনে নেয়”।
*** আহমাদ, সাহীউল জামে ৩০৪৭।
আবার অনেক পরহেজগার পিতা/অভিভাবক তার পরিবারের অনেক অশ্লীল কাজ দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন ! বা অনেকে ছোট-খাট ব্যাপার মনে করে এইগুলো কে উড়িয়ে দেন ! না কক্ষনো না, এই গুলোকে ছোট-খাট বিষয় মনে করে সেই পরহেজগার পিতা/অভিভাবক সফলকাম হতে পারবেনা। তাই চলুন আমরা সেইসব পিতা/অভিবাবকদের উপরোক্ত হাদীসটি জানিয়ে দেই। এবং তাদের দায়্যিত্ব সম্পর্কে সজাগ করে দেই।
আললাহ আমাদেরকে সঠিক পথে হেদায়েত নসিব করুন। আমিন।
———————————————————–
*মুসলিম রমনী ও পাশ্চাত্য সভ্যতার নারীর মধ্যে পার্থক্যঃ
-শাইখ আলী তানতাবীর সাক্ষাতকার আরবী দৈনিক খবরের কাগজ (আশশারকুল আউসাত) ২৭শে মুহাররাম ১৪০৯ হিজরিতে প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন যে, এক অধ্যাপক আমাকে বলেন, তিনি আমেরিকার কোন এক কনফারেন্সে “মুসলিম রমনী” বিষয়ে স্বীয় প্রবন্ধ পড়ে শোনাচ্ছিলেন। তিনি সম্মেলনের শ্রোতাদের সামনে মুসলিম রমনীদের অর্থনীতির উপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন যে, একজন মুসলিম রমনী সে নিজস্ব ফান্ড রাখতে পারে যার উপর তাঁর স্বামীর কোন অধিকার নাই। আর না পিতা তাঁর সম্পদ নিজ আয়ত্তে আনতে পারেন। যদি কোন মহিলার দারিদ্রতা চলে আসে আর দৈনিক প্রয়োজনীয় খরচসমূহের সমস্যা দেখা দেয় তবে এর দায়-দায়িত্ব তাঁর পিতা অথবা ভাইয়ের উপর বর্তায়। যদি তাঁর পিতা ও ভাই না থাকে তবে তাঁর কোন নিকট আত্মীয় তাঁর দেখাশুনার দায়িত্ব বহন করবে যে, তাঁর স্বত্বাধিকারী (ওয়ারিশ) হতে পারে। যদিও সে তাঁর চাচাত ভাই হোক না কেন? এই মেয়ের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান তাঁর বিয়ের আগ পর্যন্ত তাঁর আত্মীইয়ের উপর ওয়াজীব। এরপর যখন তাঁর বিয়ে হবে তখন তাঁর ভরণ-পোষণ এর দায়িত্ব তাঁর স্বামীর উপর বর্তাবে। মহিলা যদিও লাখপতি হয় আর স্বামী সাধারণ শ্রমিক তবুও মেয়েটিকে এমন বলা হবে না যে, সে যেন নিজের ভরণ-পোষণ নিজে বেবস্থা করে; বরং স্বামীর উপর ওয়াজীব হলো যে, পরিশ্রম করে হলেও তাঁর স্ত্রীর ভরণপোষণের বেবস্থা করা। এছাড়াও মুসলিম রমণীদের অনেক অধিকার তাদের জন্য সংরক্ষিত যা থেকে অন্যান্য জাতির নারীরা বঞ্চিত।
এই প্রবন্ধটি শোনামাত্রই এক আমেরিকান নারী যে বিখ্যাত সাহিত্যিক দাঁড়িয়ে বলতে লাগলোঃ যদি মুসলিম নারীদের জীবনের নিরাপত্তা তোমাদের (অর্থাৎ মুসলমানদের) কাছে এমনই হয়ে থাকে যেমন তুমি এই মাত্র বর্ণনা দিলে। তবে তোমরা আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে চলো। আমি তোমাদের সাথে ছয় মাস পর্যন্ত জীবন-যাপন করবো, এরপর তোমরা আমাকে হত্যা করে দিও।
আমেরিকার নারীর কথা শুনে অধ্যাপকের খুবই আশ্চর্য মনে হলো।
সুতরাং মহিলাকে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আমেরিকার নারী নিজের ও তাঁর অন্যান্য আমেরিকান নারীদের অবস্থা সম্পর্কে ধারনা দিতে গিয়ে অধ্যাপকের কথার উত্তরে বলেনঃ
যখন আমেরিকার নারীরা নারী স্বাধীনতার শ্লোগান দিতে বের হয় তখন বাস্তবে তারা বন্দী থাকে। নিজেদের সম্মানের ধারক ও বাহক মনে করে; কিন্তু বস্তুতঃ অপমান ও লাঞ্চনা বঞ্চনার গভীর গর্তে পতিত হয় যার উপলব্ধি তারা উপযুক্ত সময়ে করতে পারে না। পুরুষরা নারীদের দ্বারা সর্বনিম্ন স্তরের কাজের জন্য ব্যাবহার করে আর তাকে প্রকাশ্যে খুব সম্মান ও ভালবাসা দেখিয়ে উৎসাহিতও করে দাবার গুটির মত থাকে; কিন্তু যখন কোন বড় ধরনের বিষয় আসে তখন নারীকে ডালে পড়ে মরা মাছির মত বের করে নিক্ষেপ করে; বরং এমন অবস্থায় নারীর কাছে পরামর্শ নেয়াটাও ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে।
হ্যাঁ তবে গাড়ী থেকে নামার সময় নারীর মোলায়েম হাত বড়ই যত্নের সাথে ধরে নেয় যাতে তাঁর কোন কষ্ট না হয় এবং সে সহজে নেমে জেতে পারেন। আর ভ্রমন ও সাক্ষাতের সময় নারীদের সামনে যেতে দেয়া হয়। কখনো দেখা যায় রেল গাড়ী অথবা বাসে আসন থেকে উঠে দাঁড়ীয়ে মহিলাকে বসতে দেয়া অথবা তাঁর জন্য রাস্তা ছেড়ে দেয়া হয়; কিন্তু এর পিছনে যা করা হয় তা খুবই ঘৃণিত ও তাঁর মর্যাদা হানিকর।
আমাদের পশ্চিমা সমাজে যখনই মেয়ে যৌবনে পা রাখে তখন থেকে তাঁর পিতার আশ্রয় থেকে বঞ্চিত। পিতা তাঁর স্নেহের হাত গুটিয়ে নেয়। নিজের যুবতী মেয়ের জন্য তাঁর দরজা বন্ধ করে দেয় এবং তাকে বলেঃ যেখানে যাওয়ার যাও। তোমার আয় রোজগার তুমি নিজে করো। আজ থেকে আমার উপর তোমার কোন অধিকার বাকী নেই। এখন নিরুপায় একটি যুবতী মেয়ে কোথায় কি করবে? জীবনের জন্য তো কিছু করতেই হবে।
সুতরাং সে বাড়ী থেকে বের হয়ে বাইরে পা রাখে। জীবনের কঠিন সমস্যার পাহাড় সে একাই অতিক্রম করে। এই দুনিয়ায় মানুষ নামের পশুর আধিক্য রয়েছে। চারিদিকে ক্ষুধার্ত বাঘের ভীড়। রক্ত পিপাশু ভাল্লুক তাঁর লোভাতুর জিহ্বা খুলে শিকারের তালাশে রয়েছে। আর তাদের সামনে মোলায়েম শ্রেনীর রুপে যেই তাজা তাজা শিকার রয়েছে সব তাদের লক্ষ্য।
আহ! এই হলো সেই আমেরিকার নারী যার যৌবনের উপর সবার দৃষ্টি! তাঁর বাড়ীর পরিবারের সদস্যদের কখনো কোন ভাবনা হয় না যে, ঘর থেকে বের হলে তাঁর সম্মান-মর্যাদা কোন পেশার মাধ্যমে টিকে থাকবে? হাতের পরিশ্রমের কাজ করে না কি পবিত্রতা ও সম্মান বিক্রি করে? কখনো ভুলেও জিজ্ঞেস করে না যে, নিজেরই এই সন্তান নিজ হাতের আয় দিয়ে চলছে না কি ইজ্জত-সম্মান বিক্রি করে? কোন অফিসে সেক্রেটারীর পদে নিজের শরীরের সৌন্দর্য দেখিয়ে বেতন পাচ্ছে না কোন শো-রুমে মডেলিং করে। আর হ্যাঁ! এই মরণব্যাধি শুধু আমেরিকাতেই নয়; বরং পাশ্চাত্য সভ্যতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলে এমন সকল দেশেই রয়েছে।
-”’সোনালী কিরণ”’। পেইজ, ১২১।
গ্রন্থকার, আব্দুল মালেক মুজাহিদ। Darusssalam.

এসব ফতোয়া কি এ যুগের মুসলিম নারীরা মানবে?

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালকে প্রশ্ন করা হয়েছে, স্ত্রীর মাতা অসুস্থ, স্বামী নিষেধ করছে মা’কে দেখতে যেতে… কি করবে স্ত্রী?
তিনি বললেন, স্বামীর অনুমতি ছাড়া কিছু করা যাবে না। মা’র চেয়ে স্বামীর আনুগত্য করা তার উপর বড় ওয়াজিব। 
(উশরাতুন নিসা- নাসাঈ 1/62, তাহকীক: আলী বিন নায়েফ শাহূদ

ইমাম ইবনে তায়মিয়া বলেন, নারী যখন বিবাহিত হয়ে যায়, তখন পিতা-মাতার চেয়ে তার উপর কর্তৃত্বের অধিকার স্বামীর বেশী। স্বামীর আনুগত্য তার উপর বড় ফরয।
স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার গৃহ থেকে বাইরে যাবে না। পিতা, মাতা বা যে কেউ তাকে আদেশ করুক- স্বামীর আদেশ ছাড়া কিছু করতে পারবে না। এ কথার উপর সকল ইমাম ঐক্যমত। 
(মাজমূ ফাতাওয়া 32/261)

আব্দুল্লাহ আল কাফি হাফিযাহুল্লাহ 

______________________________________
◾আসুন এই বিষয় আরো বিস্তারিত জানি:

স্ত্রীর জন্য স্বামীর অবাধ্যতা করে বাইরে কোথাও যাওয়া জায়েয নয় যদি নিজের বাবা-মা বা আত্মীয় স্বজনের বাড়ি হোক না কেন।

এর দলিল হল, বিখ্যাত ইফকের ঘটনায় মা আয়েশা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট তার বাবা-মার কাছে যাওয়ার অনুমতি চাওয়ার হাদিস:

তিনি বলেন:
أتأذن لي أن آتي أبوي
“(হে আল্লাহর রাসূল,) আপনি কি আমাকে আমার বাবা-মার কাছে যাওয়ার অনুমতি দিবেন?” [সহিহ বুখারী ও মুসলিম]

▪ ইরাকী বলেন, আয়েশা রা. এর এ কথা থেকে বুঝা গেল, স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার পিতামাতার বাড়িতে যাবে না।” [ত্বরবুত তাসরীব ৮/৫৮

▪ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রা. এক বিবাহিত মহিলার ব্যাপারে বলেন-যার মা অসুস্থ ছিল:
طاعة زوجها أوجب عليها من أمها ، إلا أن يأذن لها
” মা’র চেয়ে স্বামীর কথার আনুগত্য করা তার জন্য অধিক অপরিহার্য। তবে স্বামী যদি তাকে অনুমতি দেয় তাহলে ভিন্ন কথা।” [শারহু মুনতাহাল ইরাদাত ৩/৪৭]

▪ সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি বলেন,
لا يجوز للمرأة الخروج من بيت زوجها إلا بإذنه ، لا لوالديها ولا لغيرهم ؛ لأن ذلك من حقوقه عليها ، إلا إذا كان هناك مسوغ شرعي يضطرها للخروج
“কোন মহিলার জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া জায়েয নয়। পিতামাতা বা অন্য কারো নিকট নয়। কারণ এটি তার উপর স্বামীর হক। অবশ্য যদি শরিয়ত সম্মত বিশেষ কোনো কারণ থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।” [ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৯/১৬৫)[

তবে স্বামীর কর্তব্য হল, সময়-সুযোগ ও প্রয়োজন বুঝে স্ত্রীকে মাঝে-মধ্যে তার পিতামাতা ও অন্যান্য মাহরাম নিকটাত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া যদি এতে ক্ষয়-ক্ষতি ও ফেতনার আশঙ্কা না করে।

♻ অবশ্য একান্ত জরুরি অবস্থায় স্বামীর অনুমতি ছাড়াও বাইরে যাওয়া জায়েয আছে। যেমন: বাড়িতে থাকা যদি তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ হয়, ঘর ভেঙ্গে পড়ে, জরুরি চিকিৎসা, ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য সামগ্রী ক্রয় ইত্যাদি।

পরিশেষে বলব, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিশ্বাস, ভালবাসা ও সুসম্পর্ক বজায় রেখে যে কোনো সমস্যা সমাধান করা যায়। এগুলো দাম্পত্য জীবনে অপরিহার্য দাবী। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের চাহিদা ও হক আদায় করবে এবং প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রাখবে। তাহলে মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়া থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।
তবে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও দাম্পত্য জীবনের বৃহত্তর স্বার্থে উভয়কে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে এবং যথাসম্ভব দ্রুত সমাধান করতে হবে। তাহলে দুজনের দাম্পত্য জীবন ভরে থাকবে অবারিত সুখ, শান্তি ও অনাবিল ভালোবাসায় ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬💠💠▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

জান্নাতী রমণীর কিছু আলামত

বিভিন্ন হাদীস থেকে জান্নাতী রমণীর পরিচয়ে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো জানা যায়:

০১. জান্নাতী রমণী তার উপর ফরয-ওয়াজিব যাবতীয় নেক ও পূণ্যের কাজে অংশ নেয় এবং তার পালনকর্তার ইবাদত করে তাঁর হক আদায় করে। সলাত-সিয়াম প্রভৃতি ফরয কাজে কখনো শিথীলতা করে না। 

০২. জান্নাতী রমণী এমন ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করবে যাতে আল্লাহর নাফারমানী নেই। গুনাহ আছে এমন কাজের আদেশ যদি স্বামী করে, তবে জান্নাতী রমণী তার কথা মানবে না। সুন্দরভাবে তা প্রত্যাখ্যান করবে এবং ঐ অন্যায় থেকে বিরত থাকবে।

০৩. নিজের ইজ্জতের হেফাযত করবে, কখনোই বেপর্দা হবে না- বিশেষ করে স্বামীর অনুপস্থিতিতে বেপর্দা হবে না, কখনই পরপুরুষের সামনে যাবে না।

০৪. স্বামীর সম্পদের হেফাযত করবে ও তার সন্তানদেরকে সঠিকভাবে লালন-পালন করবে। টাকা-পয়সা যত্র-তত্র খরচ করবে না, যা মনে চায় তাই করবে না। কারণ, এই টাকা-পয়সা সম্পর্কেও সে আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হবে।

০৫. সর্বদা এমনভাবে স্বামীর সামনে হাযির হবে যাতে তিনি খুশি হন। এজন্য অতিরিক্ত সাজগোজ ও সৌন্দর্য অবলম্বন করবে। সর্বদা হাসি মুখ নিয়ে তার সামনে থাকার চেষ্টা করবে।

০৬. সাধ্যানুযায়ী স্বামীর খেদমত করবে, তার সন্তানদেরকে উত্তম পন্থায় লালন-পালন করবে, তাদের সৎ সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়োগ করবে।

০৭. স্বামী রাগ হলে যে কোন প্রকারে তাকে খুশি করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। কেননা সেই তার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। যেমনটি ইতোপূর্বে হাদীসে উল্লেখ হয়েছে।

০৮. স্বামী তার সঙ্গ চাইলে কোনভাবেই তাতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে না। তার ডাকে সাড়া দিবে এবং পরিপূর্ণরূপে নিজেকে তার কাছে সমর্পন করবে।

এরকম জান্নাতী রমণী যেন আল্লাহ প্রত্যেক জান্নাতী পুরুষকে দান করেন।
——————–
লিখেছেন: আবদুল্লাহ আল কাফী বিন আবদুল জলিল..
দাঈ, দক্ষিণ জেদ্দা ইসলামী দাওয়া সেন্টার

শিশু সন্তানকে সলাতের প্রতি আকৃষ্ট করার উপায়

সুবাহানআল্লাহ! জান্নাতের কিছু নয়নাভিরাম বর্ণনা

◼️১. জান্নাতের ১০০টি স্তর রয়েছে। প্রতি দুই স্তরের মাঝে আসমান-জমিনের সমান ব্যবধান বর্তমান। ফিরদাওস হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু স্তরের জান্নাত, সেখান থেকেই জান্নাতের চারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হয় এবং এর উপরেই (আল্লাহ তাআলার) আরশ স্থাপিত। নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করার সময় ফিরদাওসের প্রার্থনা করবে।’’ (তিরমিজি ২৫৩১)
◼️২. জান্নাতে রয়েছে নির্মল পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং মদের সমুদ্র। এগুলো থেকে আরো ঝর্ণা বা নদী-সমূহ প্রবাহিত হবে। (তিরমিজি ২৫৭১) জান্নাতের এই মদে জ্ঞান শূন্য হয় না, কোনো মাথা ব্যথায়ও ধরে না। (সূরা আল-ওয়াকিআ ১৯)
◼️৩. জান্নাতবাসীনী কোনো নারী যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি দেয়, তবে গোটা জগত আলোকিত হয়ে যাবে এবং আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী স্থান সুগন্ধিতে মোহিত হয়ে যাবে। তাদের মাথার ওড়নাও গোটা দুনিয়া ও তার সম্পদরাশি থেকে উত্তম। (বুখারী ৬৫৬৮)
◼️৪. জান্নাতে কারো ধনুক অথবা কারো পা রাখার স্থান দুনিয়া ও তাতে যা আছে, তা থেকেও উত্তম। (বুখারী ৬৫৬৮)
◼️৫. জান্নাতের একটি গাছের নিচের ছায়ায় কোনো সওয়ারী যদি ১০০ বছরও সওয়ার করে, তবুও তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। (বুখারী ৬৫৫২)
◼️৬. জান্নাতে মুক্তা দিয়ে তৈরি ৬০ মাইল লম্বা একটি তাঁবু থাকবে। জান্নাতের পাত্র ও সামগ্রী হবে সোনা ও রূপার। (বুখারী ৪৮৭৯)
◼️৭. সেখানে জান্নাতীগণের জন্য থাকবে প্রাসাদ আর প্রাসাদ। প্রাসাদের উপর নির্মিত থাকবে আরো প্রাসাদ। (সূরা আয-যুমার ২০)
◼️৮. পূর্ণিমার চাঁদের মতো রূপ ধারণ করে জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের অন্তরে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তারা কখনো রোগাক্রান্ত হবে না। তাদের প্রস্রাব-পায়খানা হবে না। তারা থুথু ফেলবে না। তাদের নাক দিয়ে ময়লা ঝড়বে না। তাদের চিরুনী হবে সোনার চিরুনী। তাদের ধুনীর জ্বালানী হবে আগরের। তাদের গায়ের গন্ধ হবে কস্তুরির মতো সুগন্ধি। তাদের স্বভাব হবে এক ব্যক্তির ন্যায়। তাদের শারীরিক গঠন হবে (আদী পিতা) আদাম (আঃ)-এর মতো (অর্থাৎ ৬০ হাত লম্বা)। (বুখারী ৩৩২৭)
◼️৯. জান্নাতীদের খাবারগুলো ঢেকুর এবং মিশকঘ্রাণযুক্ত ঘর্ম দ্বারা নিঃশেষ হয়ে যাবে। (মুসলিম ৭০৪৬)
◼️১০. জান্নাতীরা সুখ-শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে ডুবে থাকবে। হতাশা, দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা থাকবে না। পোশাক-পরিচ্ছেদ ময়লা হবে না, পুরাতন হবে না। তাদের যৌবনও নিঃশেষ হবে না। (তিরমিজি ২৫২৬)
◼️১১. জান্নাতবাসীরা সব-সময় জীবিত থাকবে। কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। সব-সময় যুবক-যুবতি থাকবে, বৃদ্ধ হবে না। (মুসলিম ৭০৪৯)
◼️১২. জান্নাতবাসীদের প্রতি আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘‘আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করবো। অতঃপর আমি আর কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হবো না।’’ (বুখারী ৬৫৪৯)
◼️১৩. জান্নাতের ইট স্বর্ণ ও রোপ্য দ্বারা তৈরি। কঙ্কর হলো মণিমুক্তা, আর মসল্লা হলো সুগন্ধীময় কস্তুরী। (তিরমিজি ২৫২৬)
◼️১৪. জান্নাতের সকল গাছের কাণ্ড হবে সোনার। (তিরমিজি ২৫২৫)
◼️১৫. জান্নাতের ১০০ স্তরের যেকোনো এক স্তরে সারা বিশ্বের সকল মানুষ একত্রিত হলেও তা যথেষ্ট হবে। (তিরমিজি)
◼️১৬. জান্নাতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে ১০০ জন পুরুষের সমান যৌনশক্তি ও সঙ্গম ক্ষমতা প্রদান করা হবে। (তিরমিজি ২৫৩৬)
◼️১৭. জান্নাতবাসীগণ লোম, গোঁফ ও দাড়িবিহীন হবে। তাদের চোক সুরমায়িত হবে। (তিরমিজি ২৫৪৫)
◼️১৮. জান্নাতবাসী উট ও ঘোড়া চাইলে দু’টোই পাবে এবং তা ইচ্ছেমতো দ্রুত উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তাতে সেসব জিনিস পাবে, যা কিছু মন চাইবে এবং নয়ন জুড়াবে। (তিরমিজি)
◼️১৯. জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমুআয় জান্নাতী লোকেরা এতে একত্রিত হবে। তারপর উত্তরদিকের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধুলাবালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাক-পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য এবং শরীরের রং আরো বেড়ে যাবে। তারপর তারা নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসবে। এসে দেখবে, তাদেরও শরীরের রং এবং সৌন্দর্য বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, ‘আল্লাহর শপথ! আমাদের নিকট হতে যাবার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’ উত্তরে তারাও বলবে, ‘আল্লাহর শপথ! তোমাদের শরীরের সৌন্দর্য তোমাদের নিকট থেকে যাবার পর বহুগুণে বেড়ে গেছে।’ (মুসলিম ৭০৩৮)
◼️২০. জান্নাতে একজন কৃষি কাজ করতে চাইবে। তারপর সে বীজ বপণ করবে এবং চোখের পলকে অঙ্কুরিত হবে, পোক্ত হবে এবং ফসল কাটা হবে। এমনকি পাহাড় পরিমাণ স্তুপ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘‘হে আদাম সন্তান! এগুলো নিয়ে যাও, কোনো কিছুই তোমাকে তৃপ্তি দেয় না!’’ (বুখারী ২৩৪৮)
◼️২১. জান্নাতে এমন সব নিয়ামত প্রস্তুত রয়েছে, যা কখনো কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো অন্তর কল্পনাও করেনি। (বুখারী ৩২৪৪)